Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wpau-yt-channel domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/gprbuhkgtetv/public_html/ronylive.com/wp-includes/functions.php on line 6114
এই বঙ্গসন্তানটি হলেন প্রমথনাথ বসু
Social

এই বঙ্গসন্তানটি হলেন প্রমথনাথ বসু

pramanath basu

এমন একজন বঙ্গসন্তান জন্মেছিলেন যাঁকে চেনেননি  বাঙালিরা,  চিনে ছিলেন একমাত্র  জামশেদজী। কেমব্রিজে পড়া এই ভদ্রলোক  বদলে-দিয়েছিলেন দেশের শিল্প মানচিত্রটাই ।1855 সালে জন্ম এই মানুষটি ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী । মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করে জলপানি পেয়ে পড়তে গেলেন কৃষ্ণনগর কলেজে । দুবছর পর মেধা দেখে অধ্যাপকরাই পাঠিয়ে দিলেন কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্সে । বসলেন গিলক্রিস্ট স্কলারশিপ পাবার যোগ্যতা পরীক্ষায় । প্রথম হয়ে কলকাতাকে বাই বাই করে চলে এলেন কেমব্রিজে ।সালটা 1874, আর এখানে আসার পর বন্ধুত্ব হলো রবিঠাকুরের সাথে । মনে রাখবেন তিনিই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় বিজ্ঞান স্নাতক । এর পর ভর্তি হলেন Royal School of Minesএ, বিষয় ভূতত্ত্ব ও ফসিলPalaeontology। সাহেব খোকাদের পেছনে ফেলে এখানেও তিনি শেষ পরীক্ষায় প্রথম । কিন্ত আর পাঁচজন ভারতীয়র মতো মেম বিয়ে করে সেখানেই স্থিতু না হয়ে চাইলেন দেশে ফিরে আসতে । ইংল্যান্ডে থাকতেই তাঁর কানে এসেছিল ভারতে নতুন শিল্প গড়ে ওঠার পরিবেশ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে । লন্ডনে Secretary of States এর অফিসে সরকারী শিক্ষা দপ্তর অথবা Geological Survey of India তে (GSI) চাকরির জন্য দরখাস্ত করলেন । দুটোর কোনোটিতেই বৃটিশ সরকার তাকে চাকরি দিলো না ।বাধ্য হয়ে খরচ চালানোর জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতেন । এর মাধ্যমেই আলাপ হলো দাদাভাই নওরোজী ও আনন্দমোহন বসুর সাথে, তৈরী করলেন ইন্ডিয়া সোসাইটি নামে এক Socio-Political সংস্থা । এবার তাঁর বক্তৃতাতে ভারতীয়দের প্রতি বৃটেনের বঞ্চনার কথা আসতে শুরু করলো, বিপদ বুঝে সরকার GSI তে Asst. Superintendent পদে নিয়োগ করে ভারতে পাঠিয়ে দিলো । সালটা ছিল 1880, তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি এই পদে সরাসরি আসীন হয়েছিলেন । ভাগ্যিস হয়েছিলেন, আর তাই দেশের শিল্পক্ষেত্রে সূচনা হলো এক নতুন মাইলস্টোন !কলকাতার হেড অফিসে ফ্যানের তলায় বসে কাজ করার পাত্র ছিলেন না এই বঙ্গসন্তান । পরবর্তী পাঁচ বছরে মধ্যপ্রদেশের দল্লি রাজহরায় মাটির নীচে খুঁজে বের করলেন বিশাল লৌহ আকরিকের খনি । 1890 সালে দার্জিলিং অঞ্চলে আবিস্কার করেন ভূগর্ভস্থ কয়লার সঞ্চয় । আসামের ডিগবয় ও নাহারকাটিয়ায় পেট্রোলিয়াম খনিও এই বাঙালী মানুষটারই আবিষ্কার । তৈরী করেন দেশীয় পদ্ধতিতে প্রথম সাবান কারখানা ।কিন্ত যে আবিষ্কারের জন্য তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন, তা ঘটলো 1903 সালে, সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর। তৎকালীন ময়ুরভঞ্জ রাজ্যের বাঙালী দেওয়ান মোহিনীমোহন ধর তাঁর কাছে খনিজ পদার্থ পাওয়ার সম্ভাবনা জরিপ করার প্রস্তাব নিয়ে আসেন । খাতায় কলমে সম্ভাবনার উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে ঐ রাজ্যে কোনোদিন জরিপ হয়নি । জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ মানুষটি ঐ বয়সেও রাজী হয়ে যান এবং কাজ শুরু করেন । তিনমাসের মধ্যে ওখানকার গরুমহিষানী পাহাড়ের ঢালে ভূগর্ভস্থ লৌহ আকরিকের এক বিশাল সঞ্চয় খুঁজে পান । নিজের নোটবুকে লিখেছিলেন, “আমি জানি না, এখানে সঞ্চয়ের মোট পরিমাণটা কতো, কিন্ত আমার বিশ্বাস এটা একরকম অফুরন্ত এবং বেশ কয়েকটা আধুনিক ফার্নেসকে এই খনি অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবিরাম যোগান দিতে পারবে !”
তার অনুমান ভুল ছিল না, আজও ওড়িশার এই খনি থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি আকরিক লোহার উত্তোলন হয় ।24শে ফেব্রুয়ারী 1904, আকরিকের এই সঞ্চয়ের কথা জানিয়ে ভূতাত্বিক মানুষটি চিঠি লিখলেন দেশীয় শিল্পপতি জামশেদজী টাটাকে । মূলতঃ তারই আগ্রহে ঐ খনি অঞ্চলের কাছাকাছি সাকচিতে টাটা স্থাপন করলো দেশের প্রথম লৌহ ইস্পাত কারখানা ।বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন মানুষটি বুঝেছিলেন, শিল্পের উন্নতির জন্য চাই কারিগরী শিক্ষা আর তাই স্থাপন করেন Bengal Technical Institute যা পরে নাম বদলে হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ।কাজের চাপে অবশ্য সামাজিক কর্তব্য করতে ভুলে যাননি, বিয়ে করেন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও সিভিলিয়ান রমেশচন্দ্র দত্তের কন্যা কমলাকে ।পুত্র মধু কিন্ত বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেননি। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র বিয়ে করেন কেশব সেনের নাতনী সাধনাকে । মধু-সাধনা জুটির বহু হিট সিনেমা আজও বাঙালির স্মৃতিতে উজ্জ্বল ।চিনতে পারলেন এনাকে ? আমরা না চিনলেও টাটা কোম্পানি বা জামশেদপুরবাসী ভোলেনি এনাকে । প্রতি বছর ধুমধাম করে পালিত হয় এনার জন্মদিন, আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিতে আসেন খোদ রতন টাটা !দেশের অন্যতম বিজ্ঞানী এই বঙ্গসন্তানটি হলেন প্রমথনাথ বসু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *