East Bengal

অদৃষ্টের পরিহাস

মেহতাব হোসেন আর অসীম দাস একই ফ্রেমে একই দলে |
মনে পরে শাল তা সম্ভবত ২০১০ | ইস্ট বেঙ্গলের কোচ ট্রেভর মরগ্যান, মোহন বাগানের সুভাষ ভৌমিক | ধারে ভারে কাগজে কলমে আমরা বেশ এগিয়ে | একটা জয় দেখার আসায় টিভি খুলে বসেছি | খেলা চলাকালীন মেহতাব পরে যায় ঠিক ইস্ট বেঙ্গল বেঞ্চের কাছে | অসীম দাস মেহতাবের মূখের উপর বুট তুলে দায়ে | মরগ্যান ও ইস্ট বেঙ্গলের বেঞ্চের সবাই দৌড়ে আসে | মরগ্যান মাঠে ঢুকে পরে বিরোধিতা করে, পরে অবশ্য শাস্তি সরূপ ২-১ ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল বেঞ্চে বসতে পারেন নি | গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য্য মরগানের সাথে মোবাইলে কথা বলে দল চালাতেন | ঘটনার সাথে সাথে অসীম বিশ্বাস লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন | কিন্তু এই সুবিধা ইস্ট বেঙ্গলের বেশি খুন স্থায়ী হয়নি কারণ ব্যারেটোর প্লে এক্টিং আর গুরবিন্দর সিংহের মাথা গরম করার জন্যে দ্বিতীয় বার হলুদ কার্ড মানে লাল কার্ড দেখে গুরবিন্দর মাঠ ছাড়েন এবং এর পর এক অসামান্য গোল করে ব্যারেটো মোহন বাগানের হয়ে সমতা ফেরান এবং খেলা ১-১ গোলে শেষ হয় |
অসীম দাসের আচরণ খেলোয়াড় সুলভ ছিল না কিন্তু তার কাজটি তার টিমের জন্যে ফলদায়ক হয়ে| মেহতাব খেলা থেকে সরে যাওয়ার লাভ হয় মোহন বাগানের | বেকেনবাওয়ার ঠিক এই ভাবে ৯০ এর ওয়ার্ল্ড কাপে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুডি ভোলার কে ব্যবহার করে ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড এর খেলা নষ্ট করেছিলেন | আমাদের ময়দানে সুভাষ ভৌমিক তার পূর্বসারি পি. কে. ব্যানার্জীর মতো প্লেয়ার দের তাতাতে পারতেন বেশ ভালো | হয়তো তার ফলস্বরূপ অসীম দাসের এই প্রতিক্রিয়া ছিল | তবে ওই ঘটনার পর অসীম দাস ও মেহতাব হোসেন কে একসাথে দেখবো আশা করিনি| তবে তারা প্রফেশনাল | অতীত তাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিলেন |

সুভাষ ভৌমিকের এই খেলোয়াড় তাঁতানোর আরো অনেক ঘটনা মানে পরে | ২০০৯ সালে প্রচুর দিন যাবৎ যুব ভারতী তে ইস্ট বেঙ্গল মোহন বাগান কে হারাতে পারে নি | সুভাষ ভৌমিক কোচ হয়ে ফিরে আসেন ইস্ট বেঙ্গলে | বার বার দর্শক দের ইশারায় মাথা উচু করতে বলেন | ইস্ট বেঙ্গল ৩-১ গোলে খেলাটি জেতে| আরো কয়েক বছর আগে এক সময়ে ইস্ট বেঙ্গলের সমস্ত ভালো ভারতীয় খেলোয়াড় ভারতীয় শিবিরে সুযোগ পাওয়া তে কম জরি দল নিয়েও অনেক লড়াই চালায়ে শিল্ড ডুরান্ড ফাইনালে | আলভিতো বা রাজত ঘোষ দস্তিদার হয়তো অতিরিক্ত ভোকাল ডোজে লাল কার্ড দেখেছেন কখনো | কিন্তু একটা বেশি শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সেই আবেগ তা দরকার পরে |
আমাদের ছোট বেলায় ইস্ট বেঙ্গল টিমে হয়তো সেই আবেগ তা ছিল | তাই সুভাষ ভৌমিক বা পি কে ব্যানার্জী রা অনেক দুর্বল দল নিয়েও অনেক ম্যাচ জিতে ফিরেছেন | ৯৭ এ ফেড কাপ সেমিফাইনাল | মোহন বাগান তার আগে প্রায় সব দলকে গুড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো | ডায়মন্ড সিস্টেমের জয় জয়কার তখন ময়দানে | তবে হয়তো একটু বেশি আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন অমল দত্ত নয় বিপরীত দলে বাইচুং সোসো নৌশাদ মুসা দের মতো একরাশ যুব খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও বয়স্ক সত্যজিৎ চ্যাটার্জী কে একা করে দিয়ে ডায়মন্ড সিস্টেমে গেছিলেন | ফলস্বরূপ ভাইচুং এর দৌড়ে নাজেহাল হয়ে পরে সত্যজিৎ চ্যাটার্জী | ভাইচুং ময়দানে তারা হয়ে ওঠেন ওই ম্যাচেই |
এর পর মোহন বাগানের জাতীয় লীগ জয়ী দল | অনেক ম্যাচ আগেই তারা টুর্নামেন্ট জিতে ফেলেছেন | ব্যারেটো – ইগোর – স্টিফেন এই ৩ বিদেশী ময়দানে ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন | এমন অবস্থায় অনেক দুর্বল ইস্ট বেঙ্গলের মুখো মুখী | মোহন বাগান সমর্থক রা পাল তোলা নৌকা এনেছিলেন জিতে উৎযাপন করবেন বলে | খেলা শেষে পাল তোলা নৌকা মশালের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাড়কার হয়ে যায় | পরের দিন দৈনিক পত্রিকা গুলোতে এই ছবিই ছিল সব জায়গায় | সুলে মুসা আর জ্যাকসন সেইদিনের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন |
আজ ছবি তা ঠিক উল্টে গেছে | বহু বছর মানে করতে পারছি না যে দুর্বল দল নিয়ে মোহন বাগান কে ইস্ট বেঙ্গল হারিয়েছে বরং বার বার উল্টোটাই ঘটে আসছে | কখনো সুভাষ ভৌমিক কখনো সুব্রত ভট্টাচার্য্য কখনো সঞ্জয় সেন আর এখন শংকরলালের হাত ধরে অনেক দুর্বল মোহন বাগান দল শক্তিশালী ইস্ট বেঙ্গল দল কে হারিয়ে এসেছে | শেষ এক দশকের কিছু বেশি সময়ে ধরে মোহন বাগানের আধিপত্য বেশি | হয়তো বাঙালি কোচ আর বাঙালি খেলোয়াড় বোরো ম্যাচে আলাদা আবেগ নিয়ে মাঠে নামে | শিল্টন পাল বেশ সাধারণ মানের গোলকীপার কিন্তু বোরো ম্যাচে অনেক দারুন গোল বাঁচিয়েছেন | অন্যদিকে অভ্র মন্ডল ইস্ট বেঙ্গলে বাত্র | মিরশাদ বা ব্যারেটোর থেকে অভ্র কি খুব খারাপ ছিল ? হয়তো না | কিন্তু এই আবেগ তা আমরা সন্মান দি নি | যা ঘটেছিলো রন্টি ইয়াকুবু সনজু প্রধানের সাথেও |
আমাদের হয়তো অনেক কিছু ভেবে দেখতে হবে |
এর মধ্যে ক্রোমা সই করেছে | তার ফোনের ক্লিপিংস টিভি তে দেখলাম | উত্তেজিত হয়ে বলছেন আমি মোহন বাগান না ইস্ট বেঙ্গলের প্লেয়ার | শুনে ভাল লাগলো | দেখা যাক এই উত্তেজনা তা ভালো খেলাতে পরিণত হয় কিনা |
মোহন বাগান থেকে ক্রমার অপসারণ তা যুক্তি যুক্ত নয় | ডিকা অনেক বেশি খারাপ খেলছিল একটা সময়ে | সঞ্জয় সেন বিদায়ের দিন দেবাশীষ দত্ত ডিকার খারাপ খেলার কথাই বলছিলেন | কিন্তু পেনাল্টি মিস করে ক্রোমা খলনায়ক হয় ওঠে | সমর্থক দের আটকাতে তখনাৎ ক্রোমা কে তাড়ানো হয় | তবে আক্রম অনেক বোরো খেলোয়াড় |
আর বাজির থেকে ক্রোমা কিছুটা হলেও ভালো | অন্তত বল বাড়াতে জানে | গোল ও করেছে কিছু | প্লাজার জায়গায় একজন স্ট্রাইকার আসবে | আমনা সেরে উঠলে দলে ফিরবেন | বাতিলের তালিকায় তাই বাজি | তাই ২-১ ম্যাচ পরেই বাজি কে সরে যেতে হবে | বাজি নিজেও সেটা জানে | এরকম একটা পরিস্থিতি তে নিজের সেরা তা দেয়া মুশকিল |
তবু দেখা যাক আগামী দিনে কি অপেক্ষা করে আছে |
৩০ তারিখের খেলার ফলের উপর সব কিছু নির্ভর করছে | আর এমন একটা ম্যাচের আগে ইস্ট বেঙ্গল যথেষ্ট অগোছালো |